আমরা মোটামুটিভাবে হয়তো সকলেই জেনে গেছি যে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। আর এ জন্য আমাদের সকলের সচেতনতা দরকার। আমরা প্রত্যেকেই যদি সচেতন হই তাহলে আমাদের পরিবার, সমাজ তথা দেশ নিরাপদ থাকবে। আর এভাবেই আমরা করোনাভাইরাসের আক্রমন থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
এ ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য আমাদের প্রথম কাজটাই হচ্ছে এর যে ‘চেইন অব ইনফেকশান’ ( ইনফেকশান শৃঙ্খল) ভেঙে দিতে হবে। তাহলে এ ভাইরাসের বিস্তার আপনা-আপনিই বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণেই কিন্তু বারবার বলা হচ্ছে, যতটা সম্ভব ঘরেই থাকুন। বাইরে বের হবেন না। বাইরে বের না হলে কি হবে বলুন তো?
ঠিকই ধরেছেন, আমরা বাইরে বের না হলে আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে ভাইরাস সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না। আর সেটা যদি না পায় তাহলে কিন্তু আপনা-আপনি ভাইরাসের বিস্তার বন্ধ হয়ে যাবে। আর এমনটা অন্ততপক্ষে ৩ সপ্তাহ চলতে পারলে ভাইরাসের জীবনচক্রও শেষ হয়ে যাবে। মানে, ভাইরাস নিজেই মারা যাবে।
তাই আসুন ভাইরাসের বিস্তার রোধে আমরা সবাই সচেতন হই এবং আমাদের নাগরিক দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করি।
এ জন্য আমাদের করণীয় হচ্ছে :
১. ছুটির এ সময়ে যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। অহেতুক নিজের বাড়িতে ফেরার জন্য ব্যাকুল হবেন না। অথবা কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর বাসায়ও বেড়াতে যাবেন না। কেউ আপনার বাসায় আসতে চাইলে তাকে এখন আসতে বাধা দিন।
২. ছুটির এ সময়ে যারা বাড়িতে চলে গেছেন, এরই মধ্যে তারা দয়া করে আপনার বাড়িতে ‘কোয়ারেন্টিন’ বা সকলের থেকে আলাদা থাকুন, অন্তত ১৪ দিন। না হলে আপনিই হয়তো আপনার পরিবারের অন্য সকলের ভেতরে এ রোগ ছড়িয়ে দিতে পারেন। আর জানেনই তো, এ রোগ বয়স্ক মানুষের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে! ফলে আপনার বাবা-মা, দাদা-দাদির কথা বিবেচনা করে এক রুমে আপনি আলাদা থাকুন।
আপনার খাবারও আপনি নিজের রুমেই খাবেন। আলাদা বাথরুম ব্যবহার করবেন (সম্ভব হলে)। তা না হলে আপনি বাথরুম ব্যবহার করবেন সবার পরে। তারপর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবেন। এত কিছু মেনে চলা কঠিন। কিন্তু এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এটা তাই মেনে নিতেই হবে আপনার পরিবারের স্বার্থেই।
৩. বাসার প্রধান দরজার হাতল, তালা, ঘরের দরজার হাতল-যেখানে সবার হাতের স্পর্শ পড়ছে, সেগুলোও সাবান পানি দিয়ে দিনে-রাতে একাধিকবার মুছে ফেলুন।
৪. যারা লিফট ব্যবহার করেন তারা পারলে তা এড়িয়ে চলুন। না হলে লিফটের বাটন সরাসরি আঙুল দিয়ে চাপ দেবেন না। টিস্যু বা পরিষ্কার কাগজ সাথে রাখুন। পরে সেটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।
৫. হাঁচি/কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। যেখানে সেখানে কফ/থুতু ফেলবেন না (আমাদের সবচেয়ে খারাপ বদ অভ্যাস এটা)। কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে টিস্যু বা রুমাল দিয়ে ঢেকে নিন। না হলে হাতের কনুই ব্যবহার করুন। পরে ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৬) কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল এর বাটন/স্ক্রিন নিয়মিত পরিষ্কার করুন। আপনার ব্যবহৃত এসব জিনিস এখন অন্যরা ব্যবহার না করলেই ভালো। অনেকটা এমন যে, ‘যার যার তার তার’ এর মতো বিষয়। বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে আপনার ব্যবহৃত এসব জিনিস দেবেনই না।
৭. এ ছুটি চলাকালীন গরিব মানুষের যাতে খাবারের কষ্ট না হয় সেদিকে রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
৮. ভিড় এড়িয়ে চলুন। নিজের বিবেককে সমুন্নত রাখুন।
৯. নিজে নিরাপদে থাকুন৷ প্রিয়জনকে নিরাপদে রাখুন। আসুন নিরাপদ করি বাংলাদেশকে।
পরিশেষে বলব, নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগান। আবেগ দিয়ে এখনো যদি কিছু করতে থাকেন তাহলে হয়তো আপনি নিজেই মহামারিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সবকিছু রাষ্ট্র তার শক্তিপ্রয়োগ করে করাবে এমন আশা হয়ত করাই যায়। দুঃখজনকভাবে রাষ্ট্র এখন সেটাই করছে। নাগরিক হিসেবে এটা কিন্তু আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক।
আমরা উন্নত দেশের কথা বলি কথায় কথায়, কিন্তু নাগরিক হিসেবে উন্নত দেশের নাগরিকের মতো কাজ করতে পারব না বা করব না-এটা তো হয় না। কী বলেন? সেই সঙ্গে বলব, এ সময়ে গুজব ছড়াবে নানাভাবে, নানাজনে। সেসবে কান না দিয়ে নাগরিক হিসেবে নিজের বিবেককে কাজে লাগান। যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করুন।
বাস্তবতা বুঝুন। ভিড় বা জমায়েত হয় এমন জায়গা এড়িয়ে চলুন। ঘরে থেকেই যতদূর যা করা সম্ভব হয় করুন। আগে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। কারণ আপনি যদি নিজেকে রক্ষা না করতে পারেন তাহলে আপনার পরিবারকেও রক্ষা করতে পারবেন না। আবার দেখুন, প্রতিটি পরিবার যদি নিরাপদ থাকে তাহলে সমাজ নিরাপদে থাকবে। সমাজ নিরাপদে থাকার মানেই হচ্ছে রাষ্ট্র নিরাপদে থাকা।
এখন উল্টোভাবে দেখুন। রাষ্ট্র নিরাপদ মানে তো সমাজ নিরাপদ। সমাজ নিরাপদ মানে প্রতিটি পরিবার নিরাপদ। আর প্রতিটি পরিবার নিরাপদ মানে আমরা সকলেই নিরাপদ। তাই বলব, অনিরাপদ হওয়ার সকল উপায়কে এখন এড়িয়ে চলুন। পরিষ্কারভাবে এসব কাজকে না বলুন। নাগরিক দায়িত্ব সমুন্নত রাখুন।
সূত্র : ব্রেকিংনিউজ